১৮ পেরোনোর আগেই মা হচ্ছেন ৬৫% গার্মেন্টস কর্মী: আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণা

বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার (এসআরএইচআর) নিয়ে প্রথমবারের মতো কোহর্ট গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে আইসিডিডিআর,বি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে এই গবেষণার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়, যা পোশাক শিল্পের শ্রমজীবী নারীদের স্বাস্থ্য, অধিকার ও সেবাপ্রাপ্তির বাস্তব চিত্রকে তুলে ধরেছে। ঢাকার ও গাজীপুরের শহরের বস্তিতে বসবাসকারী ১৫–২৭ বছর বয়সী ৭৭৮ জন নারী শ্রমিককে দুই বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বেশিরভাগ নারী অল্প বয়সেই বিয়ে ও গর্ভধারণ করেছেন। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি নারী ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে করেছেন, এবং প্রায় ৬৫% নারী প্রথমবার মা হয়েছেন ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই। অনেকের গর্ভধারণ ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত, এবং চারজনের একজন নারী গর্ভপাত বা মাসিক নিয়ন্ত্রণ (এমআর) পদ্ধতির অভিজ্ঞতা পেয়েছেন।

আশার বিষয় হলো, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা ও জরুরি গর্ভনিরোধক সম্পর্কে জানার পরিধি বেড়েছে। দীর্ঘ মেয়াদি পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে জানার হার ৪৯% থেকে বেড়ে ৭০%-এ পৌঁছেছে, আর জরুরি পিল সম্পর্কে জানাশোনা ১৫% থেকে বেড়ে ৩৯%-এ। পরিবার পরিকল্পনায় নারী-পুরুষ সমতার প্রতি ইতিবাচক মনোভাবও বেড়েছে।

তবে সহিংসতা ছিল বড় একটি সমস্যা। ঘরে স্বামীর হাতে নির্যাতন এবং কর্মস্থলে মানসিক সহিংসতার ঘটনা অনেক বেশি। কর্মস্থলে মানসিক সহিংসতার হার দুই বছরে ৪৮% থেকে বেড়ে ৫৫%-এ পৌঁছেছে। কিন্তু বেশিরভাগ নারীই কোনো ধরনের সাহায্য চাননি, এমনকি পরিবার বা বন্ধুদের কাছেও না। কর্মস্থলে সহিংসতার ঘটনা জানানোও খুব কম হয়েছে। গার্মেন্টস কারখানাগুলোর মধ্যে খুব কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠানই নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেয়। মাত্র ২২% কারখানা স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ করে, আর ১৪% পরিবার পরিকল্পনার উপকরণ দেয়।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী নারীদের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, অনেকেই মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংকোচে থাকেন, এবং গর্ভনিরোধক ব্যবহারে ভয় বা ভুল ধারণা কাজ করে। এছাড়া, বিবাহিত না হলে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এই বাস্তবতা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার নীতিগত ও সামাজিক সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব নারী বেশি শিক্ষিত, দেরিতে বিয়ে করেছেন, বা প্রথম গর্ভধারণের আগে গর্ভনিরোধক ব্যবহার করেছেন—তাদের মধ্যে অল্প বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি কম। অন্যদিকে, যেসব নারী স্বামীর সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাদের অল্প বয়সে গর্ভধারণের সম্ভাবনা ২৬% বেশি ছিল।

নারী যখন ক্ষমতা পায়, তখন সমাজে সহিংসতা কমে আসে। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়া, স্বাধীনভাবে বাইরে যাওয়া এবং কথা বলার সুযোগ—এই বিষয়গুলোই একজন নারীকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করে তোলে। এই গবেষণা ভবিষ্যতের নীতিমালা ও কর্মসূচি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যাতে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং শিল্পের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়। যৌন ও প্রজনন শুধু স্বাস্থ্য নয়, এটি নারীর মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

 

উৎস: আইসিডিডিআর,বি’র প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Leave a Reply